ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০১/০২/২০২৫ ৯:৪০ এএম

ঢাকার বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক অর্ঘ্য অমৃত মণ্ডল (২৬)। একই মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী প্রতিভা সরকারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ের তারিখ ছিল ২৫ জানুয়ারি। কিন্তু গত ১৭ জানুয়ারি অর্ঘ্যের এক জেঠা (বাবার চাচাতো ভাই) মারা যাওয়ায় বিয়ে পিছিয়ে দিয়ে পারিবারিকভাবে তারিখ পরে ঠিক করার সিদ্ধান্ত হয়।

মৃত জেঠার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বাড়িতে আসছিলেন অর্ঘ্য। সঙ্গে বাগ্‌দত্তা প্রতিভাও ছিলেন তাঁর সঙ্গে। ইচ্ছা ছিল, আজ শুক্রবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান শেষে সবাই বসে তাঁদের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। কিন্তু এর আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অর্ঘ্যই চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সোনামুর মোড়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। অর্ঘ্য ও প্রতিভা একই মোটরসাইকেলে ছিলেন। ঘটনাস্থলে আসার পর মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা খান। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান অর্ঘ্য। গুরুতর আহত হয়েছেন প্রতিভা। তাঁকে ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন। ৭২ ঘণ্টা না গেলে তাঁরা কিছু বলতে পারছেন না।

অর্ঘ্য শ্যামনগরের সদর ইউনিয়নের চণ্ডীপুর গ্রামের অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল ও মিনতী রানী মণ্ডল দম্পতির ছেলে। অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল কালীগঞ্জ উপজেলার রতনপুর তারকানাথ বিদ্যাপীঠের ক্রীড়াশিক্ষক। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন অর্ঘ্য। তাঁদের গ্রামের বাড়ি শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি গ্রামে। প্রতিভা সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বিপ্রজিৎ সরকার ও দেবকী রায় দম্পতির মেয়ে। তিনিও বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।

অর্ঘ্যের মরদেহ বাড়িতে আনার পর এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। গ্রামের শ্মশানে অর্ঘ্যের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে
অর্ঘ্যের মরদেহ বাড়িতে আনার পর এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। গ্রামের শ্মশানে অর্ঘ্যের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার দুপুরেছবি: প্রথম আলো
নিহত অর্ঘ্যের জেঠা (বাবার আপন বড় ভাই) বাসুদেব মণ্ডল বলেন, ‘অর্ঘ্য ছিল খুবই মেধাবী। সব সময় ক্লাসে প্রথম হতো। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর সে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল একই মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী প্রতিভার সঙ্গে। বিয়ের তারিখ ছিল ২৫ জানুয়ারি। কিন্তু গত ১৭ জানুয়ারি আমার জেঠতুতো ভাই সন্তোষ কুমার মণ্ডল মারা যাওয়ায় বিয়ে পিছিয়ে দিয়ে বিয়ের তারিখ পরে ঠিক করার সিদ্ধান্ত হয়। ইচ্ছা ছিল আজ শ্রাদ্ধানুষ্ঠান শেষে সবাই বসে ওদের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। অর্ঘ্যের জেঠার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই অর্ঘ্যকে দাহ করতে হলো। আজ দুপুরে গ্রামের বাড়ি পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি গ্রামের শ্মশানে অর্ঘ্যের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।’

অর্ঘ্যের মা–বাবা দুজনেই ছেলের মৃত্যুতে পাগলপ্রায়। মা মিনতী রানী মণ্ডল বিলাপ করছেন আর বলছেন, ‘ভগবান, আমি এমন কী দোষ করেছি, আমার সোনার মানিককে এভাবে তুলে নিলে। এর চেয়ে আমাকে নিতে। আমার মানিক তো কোনো অন্যায় করে নাই। ছোটবেলা থেকে কারও সঙ্গে ঝগড়া পর্যন্ত করে নাই। তাহলে ওকে নিলে কেন। ভগবান তোমার এ কেমন বিচার।’

দুর্ঘটনার সময় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ের উপপরিদর্শক মো. রোমান মোল্যা মহাসড়কে দায়িত্বরত ছিলেন। তিনি জানান, অর্ঘ্য তাঁর বাগ্‌দত্তাকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে ঢাকা থেকে খুলনার দিকে যাচ্ছিলেন। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সোনামুর মোড়ে একটি ট্রাক আগে থেকে দাঁড়িয়ে ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সেখানে দ্রুতগতিতে আসা অর্ঘ্যের মোটরসাইকেলটি দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই চালক অর্ঘ্য মারা যান। মোটরসাইকেল আরোহী প্রতিভাও মারাত্মক জখম হন। তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় পাঠানো হয়। পরে অর্ঘ্যের পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর মরদেহ ময়নাতদন্ত না করে দাহ করার অনুমতি দেওয়া হয়। রাতেই তাঁর মরদেহ স্বজনেরা সাতক্ষীরায় নিয়ে চলে যান।

পাঠকের মতামত

রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালের পিছনের ডোবা থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম রেডিয়েন্ট গার্ডেনের অদূরে রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালের পিছনের ডোবা থেকে এক যুবকের মরদেহ ...